ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৮ মার্চ ২০২৪

Advertisement
Advertisement

নিত্যপণ্যের আগুন ওষুধে, কোনটার দাম বাড়ল কত

দিকদর্শন রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৯ মে ২০২৩

আপডেট: ১৪:১৪, ২৯ মে ২০২৩

নিত্যপণ্যের আগুন ওষুধে, কোনটার দাম বাড়ল কত

নিত্যপণ্যের দামের আগুনে পুড়ছে মানুষ। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। এরইমধ্যে বড় দুঃসংবাদ দিলো ওষুধখাত। দেশের উৎপাদনকারী শীর্ষ ৬ প্রতিষ্ঠান জীবনরক্ষাকারী ২৩৪টি ওষুধের মূল্য ১০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও বাড়িয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান; তবে তাদের নথি এখনো হাতে আসেনি। বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়েও অনেক বেশি দামে ওষুধ কেনা-বেচা হচ্ছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আরও ১০টি কোম্পানি উৎপাদিত ওষুধের দাম বৃদ্ধির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করেছে। দাম না বাড়ালে উৎপাদন বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে কয়েকটি কোম্পানি।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, কয়েক দফায় গ্যাস, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে ওষুধের বাজার অস্থির হয়েছে। এ অবস্থায় দাম বৃৃদ্ধি ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও বিধিমালা না থাকায় কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম ইচ্ছে মতো বাড়াচ্ছে। গুণগত মান বৃদ্ধি না করে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের বড় অংশই যাচ্ছে ওষুধ কিনতে। এক লাফে ওষুধের এত দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে ওষুধের দাম বাড়লে চিকিৎসা ব্যবস্থা বড় সংকটে পড়বে। একই সঙ্গে বাজার তদরকি না থাকায় নকল, ভেজাল আর নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযানে নামলেও স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শীর্ষ ছয় কোম্পানির ওষুধের দাম সর্বোচ্চ বেড়েছে। সবার শীর্ষে রয়েছে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠান বাড়িয়েছে ৫২টি ওষুধের দাম। তাদের ওষুধের দাম সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কোম্পানিটির উৎপাদিত প্রতি পিস ১০ টাকা দামের অস্টোজেন প্লাস ইএফ ট্যাবলেট এখন ১৫ টাকা। ১৯ টাকা দামের ফ্লুক্স ২৫০ মিলিগ্রাম ইনজেকশন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে। একটি কনভুলেস সিআর ২০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেটের দাম ৩২ শতাংশ বাড়িয়ে এখন ৮ টাকা করা হয়েছে।

ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যাস লিমিটেড ৪৭টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওষুধের দাম সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০৫ টাকার ওটিক্লর পাউডার ফর সাসপেনশন ১০০ মিলিলিটার বোতল এখন ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিফ্লু ১০ সিরাপের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪০ টাকা। সেফোটিম ইনজেকশনের দাম ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ১৫০ টাকার ওষুধটি এখন ১৭০ টাকা।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৪৬টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কার্ডোবিসএ২.৫ প্রতি পিস ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা করা হয়েছে। কার্ডন ২৫ এফসি ট্যাবলেট ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা করা হয়েছে। আগে ৪ টাকা ৫০ পয়সা ছিল। ন্যাপ্রক্স সাসপেনশন সিরাপ ২৮ শতাংশ বেড়ে ৭০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৩৯টি ওষুধের দাম ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ কোম্পানির সেফ ৩ ক্যাপসুলের দাম ২৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করা হয়েছে। এর আগের দাম ছিল ৩৫ টাকা। ট্রাইডিল ৫ ট্যাবলেট ২০ শতাংশ বেড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কনটিলেক্স টিএস ট্যাবলেট ২৫ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতি পিস ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৩৬টি ওষুধের দাম ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গ্লাইমিন ট্যাবলেট ৫০০ মিলিগ্রাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি পিস ৪ টাকা করা হয়েছে। ক্লোনট্রিল ০.০৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ১৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি পিস ৭ টাকা করা হয়েছে।

এদিকে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ১৪টি ওষুধের দাম ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ছয় টাকার এমডোক্যাল প্লাস ৫০ ট্যাবলেট ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি পিস ৮ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। টোফেন ট্যাবলেট ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ট্যাবলেট ৪ টাকা করা হয়েছে। ৩৮ টাকার ডিফ্লাক্স সাসপেনশন সিরাপ ৩১ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি বোতল ৫০ টাকা করা হয়েছে। তবে বাজারে এ দামের বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ বেচে উৎপাদন খরচও উঠছে না। তাই দাম বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সবকিছু দেখে দাম সমন্বয় করেছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া বলেন, ওষুধ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে চিকিৎসকদের উপঢৌকন ও ফার্মেসিদের কমিশন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ওষুধের বিজ্ঞাপন ব্যয় কমিয়ে অতিরিক্ত দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে দাম নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসনের উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো না।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531