ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৩ জানুয়ারি ২০২৫

Advertisement
Advertisement

হৃৎপিণ্ড নিজেই সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারে: গবেষণা

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

হৃৎপিণ্ড নিজেই সুস্থ্য হয়ে উঠতে পারে: গবেষণা

হৃৎপিণ্ড

মানুষের হৃৎপিণ্ডের স্বনিরাময় ক্ষমতা হৃদ্রোগের সঠিক থেরাপির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় বিষয়টি উঠে এসেছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল সার্কুলেশনে এই বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের হৃৎপিণ্ডের স্বনিরাময় ক্ষমতা হৃদ্রোগের সঠিক থেরাপির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। বিষয়টি মানুষের হৃৎপিণ্ডকে এমন এক নবায়ন ক্ষমতা প্রদান করে, যার ফলে সেটি স্বাভাবিক সুস্থ হৃৎপিণ্ডের চেয়েও বেশি সুস্থ হতে পারে।

গবেষকেরা বলছেন, এর অর্থ হলো, আমরা এমন চিকিৎসাপদ্ধতি তৈরি করতে পারি যা ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিণ্ডের সেরে ওঠার হার বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে ঠিক, কেন হৃৎপিণ্ডের সেরে ওঠার হার বাড়ে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

গবেষক সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের আণবিক জীববিজ্ঞানী ওলাফ বার্গম্যান বলেন, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো তুলে ধরছে যে হৃৎপিণ্ডের নিজে নিজে সেরে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু করার একটি লুকানো চাবিকাঠি থাকতে পারে।

গবেষক দল হৃদ্রোগে আক্রান্ত ৫২ জন রোগীর ওপর পর্যবেক্ষণ চালায়। এদের মধ্যে ২৮ জনের চিকিৎসা করা হয়েছিল লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস (এলভিএডি) ব্যবহার করে। এলভিএডি এমন একটি টুল যেটিকে সার্জারির মাধ্যমে শরীরের সঙ্গে যুক্ত করে শরীরে রক্ত পাম্প করা হয়।

উচ্চতর হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত আজীবন বা হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের আগপর্যন্ত এই সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে কিছু রোগীর হৃৎপিণ্ড এতটাই সুস্থ হয়ে যায় যে এলভিএডি সরিয়ে ফেলার বিষয়টি বিবেচনা করা সম্ভব হয় তখন। তবে এলভিএডি মানুষের হৃৎপিণ্ডের সেরে ওঠার প্রক্রিয়ায় কোনো অবদান রাখে কি না তা এখনো জানা যায়নি।

এই প্রক্রিয়ার সময় নতুন করে হৃৎপেশি কোষ (কার্ডিওমায়োসাইট) তৈরি হয় কি না তা আগে জানা ছিল না। বিষয়টি জানতে গবেষকেরা কার্ডিওমায়োসাইট কোষের পুনরুৎপাদনের বিষয়টি নজরদারি করতে গবেষক দল হৃৎকোষে রেডিওঅ্যাকটিভ কার্বন বা কার্বন-১৪-এর মাত্রা পরীক্ষা করেন। ১৯৬৩ সালে পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-১৪-এর মাত্রা ক্রমাগত কমছে, তাই এর উপস্থিতি কোষের বয়স সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দেয়।

এরপর গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে কোষের পুনর্জন্মের মাত্রা হিসাব করা হয়। হৃদ্রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিণ্ডে কার্ডিওমায়োসাইটের পুনর্জন্মের হার একটি সাধারণ সুস্থ হৃদয়ের তুলনায় ১৮-৫০ গুণ কম পাওয়া যায় গবেষণায়।

তবে গবেষকেরা আবিষ্কার করেন যে যখন একটি এলভিএডি প্রতিস্থাপিত হয়, তখন কোষগুলো দারুণভাবে পুনর্জন্ম লাভ করে, যা কিনা একটি সুস্থ হৃৎপিণ্ডের তুলনায় অন্তত ছয় গুণ দ্রুত।

গবেষকেরা হৃৎপিণ্ডের নিজে থেকে সেরে ওঠার বিষয়টির প্রক্রিয়ার আলোকে মনে করছেন, শরীরের অন্য কোথাও কোষ প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া একটি ভালো দিকনির্দেশনা দিতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হৃৎপিণ্ডকে পুনরায় সম্পূর্ণ কার্যক্ষম করার চ্যালেঞ্জ বড় হলেও বিজ্ঞানীরা অগ্রগতি করছেন। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকেরা ক্রমাগত ল্যাবে হৃৎপিণ্ডের টিস্যু তৈরি করার পদ্ধতিগুলো উন্নত করছেন।

সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো হৃৎপিণ্ডের নিজস্ব মেরামত প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত জৈবিক প্রক্রিয়াগুলো এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলে হৃৎকোষগুলোকে স্টেম সেলের মতো আচরণ করানোর কৌশলগুলোর দিকে গভীরভাবে নজর দিয়েছে। এখন আমাদের অনুসন্ধানের জন্য আরেকটি প্রতিশ্রুতিশীল পথ রয়েছে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531