শিশুর বাড়ন্ত শরীরের জন্য নিয়মিত ও সময়মত খাওয়া দাওয়া করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু খাওয়ার সময় আজকালকার শিশুরা হাজারটা বায়না ধরে। টেলিভিশনে কার্টুন দেখা বা মোবাইলে ইউটিউবে নানা রকম ভিডিও দেখা ছাড়া এই সময়ের শিশুরা ভাত তরকারি বা অন্য কোনো খাবার খেতেই চায় না। মুখে খাবার নিয়ে চিবুতে থাকলেও টিভি, ট্যাব ও মোবাইলে চলা কার্টুন বা ভিডিওটার প্রতি থাকে অত্যন্ত মনোযোগ। কি খাবার খাচ্ছে শিশুটা বুঝতেই পারছে না। খাবার খেয়ে শেষ করতে লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা।
আধুনিক নগরের জীবন মানেই ব্যস্তজীবন। আর এই হাজার ব্যস্ততার ভীড়ে বহু পিতা-মাতাই নিজের বাচ্চাটার সামনে মোবাইলে ভিডিও চালিয়ে দিয়ে সংসারের বা অফিসের জন্য টুকিটাকি কাজ করে সময় বাঁচান। আর এ ভাবেই আপনার শিশু আক্রান্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল বা টিভির নেশায়। এই ভয়ঙ্কর নিরব ঘাতক নেশাকে দূর করতে আপনাকে অসম্ভব পরিশ্রম করতে হতে পারে।
স্ক্রিনের দিকে তাকিযে থাকতে থাকতে শিশুরা কখনও অতিরিক্ত খেয়ে ফেলে আবার কভু এত ধীরে খায় যে ভাত তরকারি ঠাণ্ডা হয়ে জমে যায়। এতে অনেক শিশু আর খাওয়ার ইচ্ছে থাকে না যার ফলে শিশু শুকিয়ে যায়। শরীরে বাড়তে থাকে পুষ্টিহীনতার মত রোগ। শিশুর মেজাজ হয়ে খিঁটখিটে। স্ক্রিনের দিকে মনোযোগের কারণে শিশুরা ঠিক মত না চিবিয়েই খাবার গিলে ফেলে। ফলে খাদ্যের সঠিক পুষ্টিগুণ বাচ্চাদের শরীরে যেতে পারে না। এতে পেটের সমস্যাতেও শিশুরা ভোগে।
শিশুর এই অভ্যাস বদলাতে অভিভাবকের করণীয়
> শিশুর মোবাইল দেখে খাদ্যগ্রহণের এই অভ্যাস বদলাতে তাকে ধমকাধমকি করবেন না। বুঝিয়ে বলুন। মোবাইল দেখে খাবার খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বলুন। ওকে মারবেন না।
> সবাই এক সঙ্গে খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং খাবার শেষ করার সময় বেঁধে দিন। বড়রা নির্দিষ্ট সময়ে খাবার শেষ করে উঠে পড়ার অভ্যাস করতে থাকলে আপনার শিশুর মধ্যেও সময় মেপে খাওয়ার তাগিদ বাড়ে যাবে।
> খাওয়ার সময় হলে মেঝেতে বা টেবিলে বসিয়ে শিশুদেরকে খাওয়ানোর অভ্যাস করান। বাচ্চাকে প্রয়োজনে গল্প বলুন আর খাবার খাওয়ান। সোফায় বসিয়ে বা শুয়ে, বারান্দা ও ছাদে দৌড়াদৌড়ি করে খাবার না খাওয়ানো ভালো।
> খাওয়ার সময়ে টিভির কাছে বা মোবাইল নিয়ে আপনার শিশু ব্যস্ত হয়ে না পড়ে সেদিকে থেয়াল রাখা জরুরি। খাওয়াদাওয়া শেষ করলে শিশুকে টিভি দেখার সুযোগ করে দিবেন এ কথা প্রয়োজনে হলে বলুন। তবে তা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সেই তাগিদেই ওরা খাবার শেষ করবে। তবে খেয়াল করুন খাবার যেন ওরা ভালোমত চিবিয়ে খায়।
> প্রতিটি শিশু বড়দের অনুসরণ ও অনুকরণ করে। যেসকল অভিভাবক নিজেরাই মোবাইল দেখে বা টিভির সামনে বসে খাবার খান তাদের শিশুরা মোবাইলের প্রতি আকর্ষণের মাত্রাটাও বেশি থাকে। তাই প্রথমে সেই অভিভাবকদেরেই এই বাজে অভ্যসটা বদল করে ফেলতে হবে।
> খাওয়ার সময় শিশুদের জন্য টিভি বা মোবাইল না চালিয়ে মুখে মুখে ছড়াগান বা গল্প শোনালে শিশুর মন সহজেই কল্পনায় মগ্ন থাকবে।
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে টিভি বা মোবাইলে ভিডিও দেখার সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে বাকিটা সময় ছবি আঁকা, গল্প বা কমিক্সের বই পড়া, গাছ পরিচর্যা, সাইকেল চালানো, মাঠে বা খোলা স্থানে খেলার দিকে উৎসাহ দিতে থাকলে আপনার শিশুর মধ্যে খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল দেখা অর্থাৎ স্ক্রিন-আসক্তি কমতে পারে।