
ছোট ছেলের লাশ হিমঘরে রেখে বড় ছেলেকে আইসিইউতে দেখতে যান মা
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত শিমুল পারভিন। তার স্বামী মো. তাজুল ইসলাম গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এই দম্পতির বড় ছেলে অয়ন ইসলাম টঙ্গীর সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট ছেলে আলিফ ইসলাম বেঞ্চমার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কেজিতে পড়ত। ১০ সেপ্টেম্বর জ্বর আসে আফিলের পরদিন ১১ সেপ্টেম্বর তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা খারাপ হলে তাকে লালমাটিয়ার আল মানার বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনটি হাসপাতাল ঘুরে তিন দিনের মধ্যেই হারিয়ে গেল আলিফ।
শিমুল পারভিন বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে নিতেই অ্যাম্বুলেন্সে বসেই বুঝতে পারি, ছোট ছেলের অবস্থা খারাপ। মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পরে ছেলের লাশ কুর্মিটোলা হাসপাতালে এনে হিমঘরে রাখি। তখনো তো বড় ছেলে আইসিইউতে। ছোট ভাই মারা গেছে, তা বড় ভাইকে জানানো ঠিক হবে কি না, বুঝতে পারছিলাম না। চিকিৎসক বললেন, আপনি মা, এই সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। তারপর আমি হাসিমুখেই আইসিইউতে ঢুকি। স্বামী সঙ্গে ছিলেন। আইসিইউতেই ছেলের বিছানায় বসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলাম। জানালাম কঠিন কথাটা। বড় ছেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আমি স্বপ্ন দেখেছি ভাই মারা গেছে।
আরও পড়ুন: শাহিনের হাত-পা কেটে ফেলতে ২০ হাজার টাকা দেন সাবেক এমপি আউয়াল
শিমুল পারভিন জানান, ২০২১ সালে করোনা হলে বড় ছেলে শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল হয়ে যায়। তখন বাসার অনেক কাজের দায়িত্ব সাত বছরের আলিফই সামলাত। বৃষ্টি এলে দরজা–জানালা বন্ধ করতে হবে, বাইরে থেকে কাপড় ভেতরে আনতে হবে—এ ধরনের কাজগুলোর কথা তাকে বলে দিতে হতো না।
শিমুল জানান, বড় ছেলে আইসিইউতে যাওয়ার আগে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়। মুঠোফোনে সে সময়ের একটি ভিডিও করেছিলেন শিমুল পারভিন। তিনি বলেন, দুই ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াতে গিয়ে সেই মুঠোফোনও হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে ছোট ছেলের শেষ স্মৃতিটুকুও হারিয়ে গেছে। এই মুঠোফোনেই ছেলের সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ছবি ছিল।