ঢাকা,  শুক্রবার
০৯ মে ২০২৫

Advertisement
Advertisement

প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ধর্মযাজক, তারপর বিশ্বের ক্যাথলিকদের পোপ—ফ্রান্সিসের হৃদয়ছোঁয়া কাহিনি

প্রকাশিত: ১৮:৫৫, ২১ এপ্রিল ২০২৫

প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ধর্মযাজক, তারপর বিশ্বের ক্যাথলিকদের পোপ—ফ্রান্সিসের হৃদয়ছোঁয়া কাহিনি

পোপ

পোপ ফ্রান্সিস—বিশ্বের ১৩৯ কোটি রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা। কিন্তু তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল একেবারেই মানবিক এক আবেগ থেকে—ভালোবাসা। কৈশোরে এক সমবয়সী মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। ভালোবাসার মানুষকে না পেলে জীবনের পথ বদলে দেবেন—এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আর সেই প্রতিজ্ঞা সত্যি করে জীবনের বাকিটা সময় উৎসর্গ করেছেন ধর্ম সাধনায়। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া এক তরুণ একদিন হয়ে উঠেছেন সারা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের একজন।

প্রেমের সেই কিশোর বয়স

ফ্রান্সিসের আদি নাম হোর্হে মারিও বেরগোগলিও। ১২ বছর বয়সে তিনি ভালোবেসে ফেলেছিলেন সমবয়সী এক মেয়ে—এমিলিয়া দামন্তে। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের ফ্লোরেস উপশহরে একসঙ্গে বড় হচ্ছিলেন তারা। একদিন সাহস করে এমিলিয়াকে চিঠি লিখেছিলেন বেরগোগলিও। বলেছিলেন—“তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো, তাহলে আমি এই জীবন ঈশ্বরের জন্য উৎসর্গ করব।” সেই চিঠির সঙ্গে একটি ছোট্ট বাড়ির ছবিও এঁকেছিলেন, লাল ছাদের সেই ঘরে দুজনে সংসার পাতবেন—এমন স্বপ্ন ছিল তাঁর।

হৃদয়ভাঙা ও বিচ্ছেদ

তবে সেই চিঠি এমিলিয়ার বাবার হাতে পড়ে যায়। রেগে গিয়ে মেয়েকে মারধর করেন তিনি। এরপর থেকেই শুরু হয় দূরত্ব। এমিলিয়া বলেন, “আমার মা-বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। আমাকে ওর কাছ থেকে সরিয়ে রাখতেন। আমি নিজেও একসময় চেয়েছি, ও যেন আমার জীবনের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়। এবং সত্যিই, ধীরে ধীরে আমরা একে অপরের জীবন থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম।”

পোপের জীবনে সেই প্রেমের ছায়া

পোপ ফ্রান্সিসের ছোট বোন মারিয়া এলেনা বেরগোগলিও বলেন, “আমার ভাই কখনোই পোপ হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। তিনি খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ। পোপ হওয়ায় আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেলেন। তাই আমি চাইনি তিনি পোপ হন, কারণ এতে তাঁকে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হবে।” তবুও ভাইয়ের এই ঐতিহাসিক অর্জনে গর্বিত ছিলেন মারিয়া।

প্রেমিকাকে হারিয়ে ধর্মপথে যাত্রা

প্রেমে হার মানলেও হোর্হে মারিও বেরগোগলিও থেমে যাননি। হৃদয়ের ব্যথাকে শক্তিতে রূপান্তর করে তিনি মন দেন ধর্মচর্চায়। কঠোর সাধনার মাধ্যমে ক্রমে রোমান ক্যাথলিক চার্চে উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছান। অবশেষে ২০১৩ সালে কার্ডিনালদের ভোটে নির্বাচিত হন পোপ হিসেবে। পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের নাম রাখেন ফ্রান্সিস, সেন্ট ফ্রান্সিস অব অ্যাসিসির প্রতি সম্মান জানিয়ে।

“ওটা ছিল পবিত্র প্রেম”—এমিলিয়ার শেষ স্বীকারোক্তি

পোপ হওয়ার পর অনেক বছর বাদে এমিলিয়া সেই পুরোনো প্রেমের কথা বলেন, “এটা ছিল অবুঝ বয়সের পবিত্র প্রেম। হয়তো প্রেমিক হিসেবে নয়, কিন্তু একজন মহান আত্মার মানুষ হিসেবে সে আজও আমার হৃদয়ে রয়ে গেছে।”

শেষ কথায় মানবিক এক পোপ

পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন শুধু ধর্মীয় নেতা নন, মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও সহানুভূতির এক উজ্জ্বল প্রতীক। তাঁর জীবনের গভীরে ছিল একান্ত ব্যক্তিগত অনুভব—একটি কিশোর বয়সের প্রেম, যা হারিয়ে গেলেও তাঁকে জীবনভর পথ দেখিয়েছে। হৃদয়ের সেই ভালোবাসা থেকেই জন্ম নিয়েছিল ঈশ্বরের প্রতি তাঁর চরম আত্মনিবেদন।

এ যেন এক নিঃসঙ্গ প্রেমিকের গল্প, যে হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসের বাহক।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531