
পোপ
ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিস আজ সোমবার সকালে মারা গেছেন। ভ্যাটিকান তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৮ বছর। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের চিকিৎসার পর সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন তিনি। ১২ বছর ধরে পোপের দায়িত্ব পালন করার পর আজ তাঁর জীবনাবসান ঘটল। তাঁর মৃত্যুতে ১৩৯ কোটি ক্যাথলিক অনুসারীর জন্য শুরু হলো নতুন পোপ নির্বাচন নিয়ে অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তার সময়।
শোকাবহ বিদায়, ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার
পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন ইতিহাসে প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান পোপ এবং প্রথম জেসুইট পোপ। সামাজিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আন্তধর্ম সংলাপে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ক্যাথলিক চার্চকে অনেকটাই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পথে নিয়ে যায়। তবে তাঁর পর মৃত্যুজনিত ‘সেদে ভ্যাকান্তে’ বা ‘শূন্য আসন’ সময়কাল শুরু হয়েছে, যা চলবে নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত।
কনক্লেভ: পরবর্তী পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া
নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য ভ্যাটিকানে শুরু হবে ‘পেপাল কনক্লেভ’। এই গোপনীয় প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন ৮০ বছরের নিচের বয়সী ১৩৮ জন কার্ডিনাল। সাধারণত এই সংখ্যা ১২০-তে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে বর্তমানে অতিরিক্ত যোগ্য সদস্য রয়েছেন। নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ কমপক্ষে ৯২টি ভোট। ভোটপ্রক্রিয়া সিসটিন চ্যাপেলের ভেতরে অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রতিদিন চার দফা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রতি দফা ব্যর্থ ভোটের পর ব্যালট পুড়িয়ে কালো ধোঁয়া ছাড়া হয়, আর সফল নির্বাচনের পর বের হয় সাদা ধোঁয়া—যা বিশ্ববাসীকে জানায়, নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্ভাব্য উত্তরসূরি কারা?
পোপ ফ্রান্সিস যেহেতু অধিকাংশ কার্ডিনাল নিযুক্ত করেছেন, তাই তাঁর আদর্শের someoneকেই উত্তরসূরি হিসেবে দেখার সম্ভাবনা প্রবল। আলোচনায় আছেন:
-
কার্ডিনাল পিটার টার্কসন (ঘানা): রক্ষণশীল ও সামাজিক ন্যায়বিচারে সক্রিয়।
-
ফ্রিডোলিন অ্যাম্বোঙ্গো (কঙ্গো): শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে সোচ্চার।
-
লুইস তাগলে (ফিলিপাইন): দরিদ্রদের সেবা ও সমতা নিয়ে সক্রিয়, পোপ ফ্রান্সিসের ঘনিষ্ঠ।
-
পিটার এরডো (হাঙ্গেরি): রক্ষণশীল চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করেন, ইউরোপীয় সেতুবন্ধনে সক্রিয়।
-
পিয়েত্রো পারোলিন (ইতালি): ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অব স্টেট, কূটনীতিতে দক্ষ।
-
মাত্তেও জুপ্পি ও মারিও গ্রেচ (ইতালি ও মাল্টা): চার্চ সংস্কারে আগ্রহী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি।
ক্যামারলেঙ্গোর দায়িত্ব
পোপের মৃত্যু নিশ্চিত করার দায়িত্ব এবং নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়েছেন ভ্যাটিকানের ক্যামারলেঙ্গো, কার্ডিনাল কেভিন ফ্যারেল। তবে তিনি নীতি বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
ইতিহাস বলছে…
পোপ নির্বাচনে সময় লাগতে পারে কয়েক দিন থেকে শুরু করে কয়েক বছরও। যেমন ১২৭১ সালের নির্বাচনে লেগেছিল তিন বছর। যদিও সাম্প্রতিক কনক্লেভগুলো দ্রুত সমাপ্ত হয়েছে। ২০১৩ সালে পোপ ফ্রান্সিস নির্বাচিত হন মাত্র কয়েক দিনের ভোটে।
বিশ্বজুড়ে এখন নজর ভ্যাটিকানের দিকে। কে হবেন নতুন পোপ—এশিয়া, আফ্রিকা না কি ইউরোপ থেকে আসবেন নতুন নেতা—তা জানার জন্য পুরো ক্যাথলিক বিশ্ব অপেক্ষা করছে নতুন সাদা ধোঁয়ার ইঙ্গিতের।