
কুয়েত
কুয়েতে নাগরিকত্ব বাতিলের নতুন সংশোধনী রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ৮৪ বছর বয়সী আমির মিলাশ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবহ দেশটির শাসনভার গ্রহণের পর থেকে কর্তৃত্ববাদী নীতির দিকে এগোচ্ছেন। গণতন্ত্রকে ‘রাষ্ট্র ধ্বংসের হাতিয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি সংসদ স্থগিত করেছেন এবং সংবিধান সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে, পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
নাগরিকত্ব বাতিলের নতুন বিধান
গত ডিসেম্বরে একটি আইন সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব বাতিলের এখতিয়ার আরও প্রসারিত করা হয়েছে। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নৈতিক দুর্নীতি, অসততা অথবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ কার্যকলাপের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে। এর মধ্যে আমির বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সমালোচনাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
একটি সুপ্রিম কমিটি নাগরিকত্ব বাতিলের মামলা পর্যালোচনা করে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে নাগরিকত্ব হারানো ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাগরিকত্ব বাতিলের বিস্তৃত প্রভাব
গত সেপ্টেম্বর থেকে কুয়েতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে কুয়েতি নাগরিককে বিয়ে করা নারীরা, যারা নাগরিকত্ব হারিয়ে রাষ্ট্রবিহীন হয়ে পড়েছেন এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা বা শিক্ষা ব্যবস্থার সুবিধা পাচ্ছেন না।
এছাড়াও, নাগরিকত্ব হারানো ব্যক্তিদের জমি মালিকানা, ব্যবসা পরিচালনা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। গবেষক ক্লেয়ার বেউগ্রা মন্তব্য করেছেন যে, "এই পদক্ষেপগুলোর গতি এবং আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কুয়েতের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। সরকার এলোমেলোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।"
রাজনৈতিক বিরোধীদের টার্গেটকরণ
কুয়েতে গুজব রয়েছে যে, এই পদক্ষেপের আড়ালে রাজনৈতিক বিরোধীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এই নাগরিকত্ব বাতিলের অন্যতম উদ্দেশ্য রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করা।
বিডুন সম্প্রদায়ের অবস্থা
বিডুন নামে পরিচিত নাগরিকত্বহীন জনগোষ্ঠী, যারা বহু প্রজন্ম ধরে কুয়েতে বাস করলেও নাগরিকত্ব পাননি, তাদের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। প্রায় এক লাখ বিডুন ব্যক্তি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেও তা পাননি। ফলে তারা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
উপসংহার
কুয়েতে নাগরিকত্ব বাতিলের এই প্রবণতা দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বিশেষ করে নাগরিকত্বহীন ব্যক্তিদের মৌলিক মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যদিও সরকার বিয়ে করা কুয়েতি নারীদের নাগরিকত্ব পুনর্বহালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।