শততম বছর পূর্ণ করে চলে গেলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম দিকপাল হেনরি কিসিঞ্জার। স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তাঁর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস জানিয়েছ, হেনরি কিসিঞ্জার কানেকটিকাটে নিজ বাড়িতে মারা যান। মৃত্যুর আগপর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন এই রাজনীতিবিদ ও বৈশ্বিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রাজ্ঞ কূটনীতিবিদ। এই শেষ বয়সে এসেও তিনি হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিতেন, সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে কংগ্রেসের শুনানিতেও অংশ নেন কিসিঞ্জার। এমনকি চলতি বছরের জুলাইয়ে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বেইজিং সফরেও গিয়েছিলেন।
জার্মান বংশোদ্ভূত ইহুদি কিসিঞ্জার ১৯৭০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। যে সময় তিনি ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্থাপন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনা, ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং উত্তর ভিয়েতনামের সঙ্গে প্যারিস শান্তি চুক্তিতে ছিল তার বিশেষ অবদান।
১৯৭৪ সালে রিচার্ড নিক্সন পদত্যাগ করলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান স্থপতি হিসেবে কিসিঞ্জারের রাজত্বও ক্ষয়ে পড়ে। সক্রিয়ভাবে পররাষ্ট্রনীতিতে তার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কমে গেলেও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের অধীনেও সক্রিয়ভাবে মার্কিন প্রশাসনে কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করেন তিনি। এবং আমৃত্যু মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে নিজস্ব দৃঢ় মতামত ব্যক্ত করেছেন।
অনেকে কিসিঞ্জারকে তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা ও বিস্তৃত অভিজ্ঞতার জন্য প্রশংসা করলেও অনেকেই তাঁকে কমিউনিস্টবিরোধী একনায়কদের সমর্থনের অভিযোগে ও লাতিন আমেরিকায় যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেন। হেনরি কিসিঞ্জারকে ১৯৭৩ সালে উত্তর ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়। কিন্তু লি ডাক থো তাঁর নোবেল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
শিক্ষাজীবনে কিসিঞ্জার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি সেখান থেকে বিএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। তার আগে তিনি বছর তিনেকের মতো মার্কিন সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন। কিসিঞ্জার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন।