ঢাকা,  শুক্রবার
২৯ মার্চ ২০২৪

Advertisement
Advertisement

সেন্ট মার্টিন কি হারিয়েই যাবে?

দিকদর্শন রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:১৭, ৩০ মে ২০২৩

আপডেট: ১০:২৬, ৩১ মে ২০২৩

সেন্ট মার্টিন কি হারিয়েই যাবে?

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। প্রবালদ্বীপটির অস্তিত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন উদ্বেগ। যদিও মোখার আঘাতের আগেই সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

গত ১৪ মে ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূল ছুঁয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বাংলাদেশের উপর দিয়ে না গেলেও এবং ভাটার সময় ঝড় আঘাত হানায় জলোচ্ছ্বাস তেমন না হলেও প্রবালদ্বীপটির পশ্চিমপাড়া, পূর্বপাড়া, দক্ষিণপাড়া, উত্তরপাড়া, নজরুলপাড়া, মাঝেরপাড়া, ডেইলপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপাপাড়ায় সাগরতীরের কয়েক ফুট অংশ ভেঙে সাগরে মিশে গেছে। 

ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণে সেন্ট মার্টিনের কয়েকটি এলাকা ক্ষয়ের ঝুঁকিতে থাকলেও এ ধরনের ক্ষয়কে কেবল ‘মোখা’র প্রভাব বলতে নারাজ একজন বিশেষজ্ঞ।

সাময়িকভাবে দ্বীপের স্থলভাগের কী পরিমাণ ক্ষয় হয়েছে বা সাগরে মিশে গেছে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার আবু শরীফ মো. মাহবুব-ই-কিবরিয়া জানান, দ্বীপের উত্তরপাড়া, মাঝের পাড়া ও গলাচিপাপাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ঢেউয়ের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি পাড়ার জেটি এলাকার কিছু অংশ ভাঙতে ভাঙতে হোটেল স্থাপনার কাছাকাছি চলে এসেছে।

ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের প্রধান, ‘সেন্ট মার্টিনের উত্তর দিকে উপকূলের কিছু অংশ ১০ থেকে ১৫ ফুট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সাগরে মিশে গেছে। এছাড়া গলাচিপার কিছু অংশও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে পুরো দ্বীপের উপকূলে যেসব অংশে সেডিমেন্টেশন বেশি, সেগুলো অল্প করে হলেও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড় মোখায় সেইন্ট মার্টিনের অনেক গাছপালা ও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস বেশি না হওয়ায় খুব বেশি ভাঙেনি। 
তিনি জানান, দ্বীপের কতটুকু অংশ বিলীন হয়েছে তা নির্ধারনের পরিকল্পনা করেছে ইন্সটিটিউটের একটি দল। 

দ্বীপের ‘সয়েল প্রোফাইলিংয়ের’ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবু শরীফ জানান, স্বল্প গভীরে (গড়ে ৩-৫ মিটারের মধ্যে) পাথর পাওয়া যাওয়ায় এ ‘রক আইল্যান্ডের’ সাগরে একেবারে বিলীন হওয়ার বা ডুবে যাওয়ার কোনো শঙ্কা নেই।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবালদ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। 

সর্বতোভাবে দ্বীপটি সমতল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা থেকে ৩.৬ মিটার উপরে। এখানে পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর।

দ্বীপটি ৭.৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিম এবং দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক জুড়ে বিন্যস্ত। ভৌগোলিকভাবে এটি তিনটি অংশে বিভক্ত। 

উত্তর অংশকে বলা হয় নারিকেল জিনজিরা বা উত্তর পাড়া। দক্ষিণ অংশটি দক্ষিণ পাড়া; দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তৃত একটি সংকীর্ণ লেজের মত এলাকা। একটি সংকীর্ণ কেন্দ্রীয় অঞ্চল বা মধ্য পাড়া দুটি অংশকে যুক্ত করেছে। বেল্ট বা ফিতার মতো সংকীর্ণতম অংশটি গলাচিপা নামে পরিচিত। 

মূল দ্বীপ ছাড়াও এখানে কয়েকটি বিশিষ্ট ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ছেড়াদিয়া বা সিরাদিয়া নামে অভিহিত করা হয়, যার অর্থ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। 

উত্তর পাড়ার মাঝামাঝি অঞ্চলে একটি অগভীর উপহ্রদ রয়েছে এবং জোয়ারের সময় পশ্চিম তীরের একটি সংকীর্ণ নদীখাতের মাধ্যমে এটির সাথে সমুদ্রের সংযোগ ঘটে। 

প্রশাসনিকভাবে সেন্ট মার্টিন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার একটি ইউনিয়ন। সেখানে গ্রাম আছে সব মিলে নয়টি। স্থায়ী বাসিন্দা প্রায় দশ হাজার। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান মোখার আগে-পরে সেন্ট মার্টিনের সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দ্বীপের বালুকাময় কিছু এলাকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষয়ে যাওয়া অংশ সাগরপাড়ের ভরাট বালিময় এলাকা। কী পরিমাণ ক্ষয়ে গেছে, তা পরিমাপ ছাড়া বলা যাবে না। তবে উত্তর-পূর্ব অংশের ৫ ফুটের মত হতে পারে। এটা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে, সহসাই আপনার একটা সংবাদ পাবেন।’

কামরুজ্জামান বলেন, ‘দ্বীপের একটি অংশে গিয়েছিলাম, দেখলাম কিছু অংশে ক্ষয় দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীও ছিলেন, উনিও দেখেছেন। এখানে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে পরিবেশগত কিছু বিষয় রয়েছে, উনারা এটা নিয়ে একটা বড় পরিসরে সমীক্ষা করতে চাইছেন। এতে জীববৈচিত্রের পাশাপাশি এ ধরনের ঝুঁকি কিভাবে ঠেকানো যায় তা নিয়ে কর্মপরিকল্পনা থাকবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউভিার্সিটির ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড হাইড্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আফতাব আলম খান বলছেন, মোখার প্রভাবে সেন্ট মার্টিনের ‘লাইন ইরোশন’ হয়নি। ভূতাত্তিক গঠন ও অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে উত্তর ও মাঝের অংশে ক্ষয় হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার সময়ে বিশেষ কারণে দ্বীপের একটি অংশ ভাঙছে, তা নয়।

তিনি বলেন, ‘দ্বীপের উত্তরে এক ধরনের লং শোর কারেন্ট বিদ্যমান, মানে এখানে ঢেউয়ের একটা প্রভাব রয়েছে। সমুদ্রতীর অভিমুখী এসব জোয়ারের প্রভাব অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় থাকে। ওশানাগ্রোফির কিছু এ ধরনের স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। এ জন্যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয় হয়ে থাকে। এটাকে মোখার প্রভাব বলা ঠিক হবে না।’

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531