ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
২৩ অক্টোবর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

অতীতের যেকোনো সময়ের ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

অতীতের যেকোনো সময়ের ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেন জামায়াত আমির

জামায়াত আমির

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, শুধু একাত্তরের ভূমিকার জন্য নয়, সাতচল্লিশের ভারতভাগ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যে কোনো ‘ভুল’ করে থাকলে তার জন্য শর্তহীনভাবে ক্ষমা চাইছে জামায়াত।

সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি দলের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেন।

শফিকুর রহমান বলেন, এই কিছুদিন আগে এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেব যখন ফ্রি হলেন জেল থেকে, তখন আমি বলেছি, ‘শুধু একাত্তর না, সাতচল্লিশ সাল থেকে শুরু জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা কেউ যদি কোনো কষ্ট পান; কারো যদি কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে; আমি সব ব্যক্তি এবং সংগঠনের পক্ষে নিঃশর্তে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই, আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।”

তিনি বলেন, আজকের দিন পর্যন্ত আমরা ভুল করি নাই-এ কথা বলব কীভাবে? আমরা মানুষ, আমাদের সংগঠন একটা মানুষের সংগঠন; আমাদের একশটার মধ্যে ৯৯টা ডিসিশন সঠিক, একটা তো বেঠিক হইতে পারে। সেই বেঠিক একটা ডিসিশনের জন্য আমার জাতির তো কোনো ক্ষতিও হতে পারে। তাহলে সেই ক্ষেত্রে আমার কোনো ডিসিশনে জাতির ক্ষতি হলে আমার মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়?

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামায়াতে ইসলামীর তরফে প্রথম নিঃশর্ত ক্ষমতা চাওয়া হয় গেল ২৭ মে। সেদিন যুদ্ধাপরাধের মামলায় দলের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার পর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চেয়েছিলেন শফিকুর রহমান।

তিনি বলেছিলেন, “যখন যেভাবে হোক, মানুষ আমরা কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে না। দল হিসেবে আমরা দাবি করি না যে- আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে।

শফিকুর রহমান বলেন, একাত্তরে জামাতের কোনো ভূমিকা ছিল না? অবশ্যই ছিল। জামায়াত তখন ফিল করেছিল যে, পাকিস্তান ইউনাইটেড থাকা দরকার। তখনও কিন্তু পাকিস্তান; আওয়ামী লীগের বহু লিডার পাকিস্তান সরকারের আন্ডারে চাকরি করেছে। বেতন নিয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের লিডার পরিবারের অনেকে তৎকালীন পাকিস্তানের সরকারের রেশন নিয়েছে। বেনিফিট নিয়েছে। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। বিপদের সময় এটা সরকারের দায়িত্ব। নাগরিকদেরকে দেখা- দেখেছে। সে কোন দলের, এটা আমাদের দেখার ব্যাপার না। সেগুলো বাস্তবতা।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে?

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন,  আমরা যদি দেশ পরিচালনার সুযোগ পাই, তাহলে দেশটা কি আফগান হবে, নাকি ইরান হবে, নাকি ইন্দোনেশিয়া হবে না লেবানন হবে, না পাকিস্তান হবে? আমরা যদি সুযোগ পাই—এটা বাংলাদেশ হবে, ইনশাআল্লাহ। এটা অন্য কোনো দেশ হবে না। আমাদের দেশের কৃষ্টি, কালচার, সভ্যতা, যুগের পর যুগ মিলেমিশে চলার যে সংস্কৃতি আমরা গড়ে তুলেছি, তার মধ্যে যে দু-চারটি কাল দাগ পড়েছে, ওগুলোকেও আমরা উপড়ে ফেলব ইনশাআল্লাহ; যাতে এখানে দল-ধর্মের ব্যবধানের কারণে জাতি আর বিভক্ত না হয়।

তিনি বলেন, আমরা এখন আর মেজরিটি-মাইনোরিটি- এটাও আমরা স্বীকার করি না; আমরা বলি ‘উই নিড ইউনিট’। আপনি যখনই মেজরিটি-মাইনোরিটি বলবেন, তার মানে একটা দেশকে দুভাগে ভাগ করবেন। এবং একদল আরেক দলের মুখোমুখি হয়ে যাবে। সেই কাণ্ড-কারখানাটাই তো আমরা ৫৪ বছর দেখেছি। ওটা আর আমরা দেখতে চাই না।

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে শফিকুর বলেন, মানুষ নিজের তার জায়গা শিফট করতে পারে; কিন্তু প্রতিবেশী পাল্টাতে পারে না। আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে রেসপেক্ট করতে চাই। একইভাবে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর কাছ থেকে পাওনা রেসপেক্টটুকু চাই। এটা হতে হবে মিউচুয়াল রেসপেক্টের ভিত্তিতে।

এখানে আমরা সমতার কথা বলছি না। কারণ, ভারত হচ্ছে বাংলাদেশের চেয়ে ২৬ গুণ বড় একটি দেশ; দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ। তাদের রিসোর্স, ম্যানপাওয়ার, ল্যান্ড হিউজ দ্যান আওয়ার পিপল।

তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে তাদের জায়গায় সম্মান করতে চাই। কিন্তু আমাদের যে ছোট্ট একটি ল্যান্ড আছে, আর ১১৮ মিলিয়ন পপুলেশন আছে, এটাকেও তাদের রেসপেক্ট করতে হবে। দিস ইজ আওয়ার ডিমান্ড। যদি এটা হয়, তাহলে দুই প্রতিবেশী শুধু ভাল থাকব না, এক প্রতিবেশীর কারণে আরেক প্রতিবেশী বিশ্ব দরবারেও সম্মানিত হব।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531