ঢাকা,  শনিবার
২৭ এপ্রিল ২০২৪

Advertisement
Advertisement

আজকের দিনে যেভাবে ক্ষমতা দখল করে নেন এরশাদ

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ২৪ মার্চ ২০২৪

আজকের দিনে যেভাবে ক্ষমতা দখল করে নেন এরশাদ

জেনারেল এরশাদ

আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ভোরে দেশে সামরিক শাসন জারি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দিনটি ছিল বুধবার।

রক্তপাতহীন একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নেন জেনারেল এরশাদ। সামরিক ফরমান জারি করে তিনি রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, জাতীয় সংসদ মন্ত্রিসভা বাতিল করেন এবং স্থগিত করেন সংবিধানের কার্যকারিতা।

সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন ১৯৮১ সালের ৩০ মে। তখন জেনারেল এরশাদ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যাকাণ্ডের   মাস পর সামরিক শাসন জারি করেন জেনারেল এরশাদ। এই ৯ মাস তিনি ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলেন।

প্রয়াত রাজনীতিক মওদুদ আহমদ জেনারেল এরশাদের সরকারে উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হয়েছিলেন। তারগণতন্ত্র এবং উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ, প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সামরিক শাসনশিরোনামে বইয়ে তিনি লেখেন, ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ সামরিক অধিনায়কেরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে একটি অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা কৌশল চূড়ান্ত করেন।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যেদিন হত্যা করা হয়, এরশাদ চাইলে সেদিনই ক্ষমতা দখল করতে পারতেন। কিন্তু তিনি সে সুযোগ নেননি। এ প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ তাঁর বইয়ে এর কারণ তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, জেনারেল এরশাদ তৎকালীন সেনানায়কেরা জিয়া হত্যাকাণ্ডের দায়দায়িত্ব নিতে চাননি। তাঁরা সেদিন ক্ষমতা হাতে তুলে নিলে তাঁদের প্রতি জনমনে সন্দেহ তৈরি হতো। ফলে ক্ষমতা দখলে বিলম্ব করার ক্ষেত্রে এটিই বড় কারণ ছিল।

জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতিতে কেন লম্বা সময় নিয়েছিলেন, সে বিষয়ও উঠে এসেছে মওদুদ আহমদের বইয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৩ দিনের মাথায় বিচারপতি সাত্তার ৪২ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। এর পরদিনই এরশাদ ঢাকার সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে একটি বিবৃতি মারফত সংবাদপত্র বার্তা সংস্থার সম্পাদকদের কাছে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছিলেন।

১৯৮১ সালের নভেম্বরে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।  সেই নির্বাচনের এক মাস আগে ১৯৮১ সালের অক্টোবরে ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ। এর কিছুদিন পর তিনি বাংলাদেশের হলি ডে পত্রিকায় আরেকটি সাক্ষাৎকার দেন। দুটি সাক্ষাৎকারেই এরশাদ রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশীদারত্বের কথা বলেছিলেন। তা তিনি তখন বিচারপতি সাত্তারকেও জানিয়েছিলেন।

অন্যদিকে ২৪ মার্চের অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরিতে বিচারপতি সাত্তার সরকারের মন্ত্রীদের দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক সংকট বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন জেনারেল এরশাদের পরামর্শে মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্যকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল।

বিচারপতি সাত্তার সরকারের যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন বিএনপির সাবেক নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। তিনি বর্তমানে এলডিপির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছিলেন এরশাদ। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের একটা বড় অংশ এরশাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতেন। এরশাদের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য সরকারের ভেতর থেকেই একটা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করানো হয়েছিল।

অলি আহমেদ আরও উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীর ভেতরেও মুক্তিযোদ্ধা অমুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের হত্যা করার জন্য চট্টগ্রামে এক জায়গায় পোস্টিং দিয়ে জড়ো করা হয়ছিল এবং তাঁদের সেখানে হত্যা করা হয়। এগুলোও করা হয়েছিল ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে।

অলি আহমেদ বলেন, তিনি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে বলেছিলেন, এরশাদ ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে তাঁকে সেনাপ্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা দরকার। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তা আমলে নেননি।

১৯৮১ সালের ২৩ মার্চ দিবাগত রাতে সেনাসদস্যরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়েন। সংঘটিত হয় অভ্যুত্থান। ২৪ মার্চ ভোরে সামরিক শাসন জারি করেন জেনারেল এরশাদ। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যে জাতীয় স্বার্থে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারের সেই ভাষণের পরপরই ভাষণ দেন জেনারেল এরশাদ।

সামরিক আইন জারি করার ১০ ঘণ্টা পর সেই ভাষণে জেনারেল এরশাদ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে শিগগিরই সাধারণ নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531