ঢাকা,  বৃহস্পতিবার
০৩ অক্টোবর ২০২৪

Advertisement
Advertisement

গোদ কেন হয়

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ৭ আগস্ট ২০২৪

গোদ কেন হয়

গোদ

গোদ বা ফাইলেরিয়াসিস একধরনের পরজীবীর সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। কিউলেক্স মশার কামড়ের মাধ্যমে এই জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। শরীরে ঢুকে মানুষের লিমফেটিক সিস্টেমকে আক্রমণ করে। ফলে লসিকারস ঠিকভাবে প্রবাহিত না হতে পেরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জমতে শুরু করে। এভাবে অঙ্গটি ধীরে ধীরে ফুলে মোটা হতে থাকে। একই সঙ্গে অঙ্গটির ত্বকের নিচে টিস্যুর ক্ষতি করে। মশা এই রোগের জীবাণু বহন করে। কিউলেক্স ছাড়া অ্যানোফিলিস বা এডিস মশার কামড়েও গোদ রোগ হতে পারে।

রোগের লক্ষণ কী
অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। রক্তে পরজীবীর সংখ্যাধিক্য হয়ে প্লীহা আক্রান্ত হলে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। প্রথমে অল্পমাত্রার জ্বর থাকে, সঙ্গে লিম্ফনোড বা নালিতে ব্যথা হয়, ফুলে যায় এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। সাধারণত পা, হাত, অন্ডকোষসহ শরীরের অন্যান্য স্থান আক্রান্ত হয়। পা বা হাত অনেক সময় ছোটখাটো হাতির পায়ের মতো বিশাল হয়ে যায়, হাতির চামড়ার মতো চামড়া ভারী, মোটা, কুঁচকানো ও কালো হয়ে যায় বলে একে এলিফ্যানটিয়াসিসও বলা হয়।

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তা ছাড়া আইসিটি, এক্স–রে, বায়োপসি বা পিসিআর করেও রোগ নিশ্চিত করা সম্ভব।

চিকিৎসা যেমন
এলবেনডাজল, আইভারমেকটিন বা ডাই–ইথাইল কার্বামাজেপিন নামক ওষুধে এই রোগ ভালো হয়। তবে দুই বছরের কম বয়সের শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা এই ওষুধ খেতে পারবেন না। অন্ডকোষ ফুলে গিয়ে হাইড্রসিল হলে বা হাত-পা বেশি মোটা হয়ে গেলে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

ফাইলেরিয়া হাসপাতাল
আমরা অনেকেই জানি না যে ফাইলেরিয়ার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে একটি আবার বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃত। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে জাপানের সহযোগিতায় বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১২ সালে সাভারে আরও একটি ৫০ শয্যার অত্যাধুনিক ফাইলেরিয়া হাসপাতাল চালু হয়। সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি ফাইলেরিয়া নিয়ে গবেষণারও সুযোগ আছে।

প্রতিরোধ
ফাইলেরিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাসস্থান, বিদ্যালয়, হাসপাতালের আশপাশের ঝোপঝাড়, ডোবা, ফুলের খালি টব, গর্ত, খাল, পচা পুকুর ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। শরীরে মশারোধী রিপেলেন্ট লোশন লাগানো যেতে পারে। বিকেলের দিকে বাড়ির জানালা বন্ধ করে দিতে হবে। এতে করে শুধু ফাইলেরিয়া নয়, মশাবাহিত অন্যান্য রোগও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এ ছাড়া ফাইলেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যাঁরা বাস করেন, যাঁদের পরিবারে ফাইলেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী আছে, তাঁদেরও প্রতিষেধক ওষুধ খাওয়া জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশকে ফাইলেরিয়ামুক্ত ঘোষণা করে। সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

ডা. কাকলী হালদার, সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /mnt/volume_sgp1_05/p1kq0rsou/public_html/details.php on line 531