ঢাকা,  সোমবার
০৩ নভেম্বর ২০২৫

Advertisement
Advertisement

৪৫ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার, উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ২ নভেম্বর ২০২৫

৪৫ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার, উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

কলকাতা

বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টাকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ধরা পড়েছেন অন্তত ৪৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যে ১৫ জন নারী ১১ জন শিশু রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করার সময় হাকিমপুর সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা তাদের আটক করে। পরে বসিরহাট থানার হাতে হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান।

এই ঘটনার পর থেকেই সীমান্তজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একই সময়ে রাজ্যে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম, যা নিয়ে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ গভীর আতঙ্কে রয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় বিএলও কর্মকর্তারা পুরোনো কাগজপত্র যাচাই করছেন, এবং ২০০২ সালের আগের নথি চাওয়ায় অনেকের পক্ষে তা দেখানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকরাও এখন নিজেদের পরিচয় নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন।

এক বাসিন্দা মহম্মদ আলম বলেন, আমার ভোটার কার্ড আছে, আমি ভোট দিয়েছি। কিন্তু ২০০২ সালের আগের কোনো কাগজ নেই। এখন যদি নাম কেটে দেয়, আমরা কোথায় যাব?

একই গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা বিবি বলেন, আমি জন্ম থেকেই এখানে, কিন্তু মা-বাবার কোনো কাগজ নেই। যদি তাদের বের করে দেয়, আমি একা থাকব কিভাবে?

এমন প্রেক্ষাপটে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা দ্রুত পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পালাওডিটেক্ট, ডিলিট, ডিপোর্ট।

অন্যদিকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশিরা ঢুকল কীভাবে? সীমান্ত তো বিএসএফের নিয়ন্ত্রণে। আগে ঢুকেছে, এখন বের হচ্ছে, আর কেন্দ্রীয় সরকার আবার সীমান্ত খোলার কথা বলছে কেমন দ্বিচারিতা?

রাজনৈতিক এই টানাপোড়েনের ফলে সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ আরও উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে আত্মগোপনে গেছেন, আবার কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামে এখন লোক কমে গেছে। সবাই কাগজপত্র ঠিক করতে ব্যস্ত।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বলেছেন, দেশের নিরাপত্তার জন্য অনুপ্রবেশকারীরাই সবচেয়ে বড় হুমকি। ভারতে থাকা সব অনুপ্রবেশকারীকে বের করেই ছাড়ব।

তার এই বক্তব্যের পর থেকেই বিজেপি নেতারা আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, এসব বক্তব্য নির্বাচনকে প্রভাবিত করার রাজনৈতিক কৌশল মাত্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, উভয় দলই এই ইস্যু থেকে নিজেদের ভোটব্যাংক শক্ত করার চেষ্টা করছে। বিজেপি যেখানেজাতীয় নিরাপত্তা বার্তা দিচ্ছে, তৃণমূল সেখানেমানবিক সহানুভূতি ভাষা ব্যবহার করছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমান্তের বাস্তবতা অনেক জটিল-কারণ দুই দেশের সীমান্তে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাসকারী অনেক মানুষ এখন নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করে বলেছে, অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানোর নামে যেন প্রকৃত নাগরিকদের হয়রানি না করা হয়। সীমান্তে দালালচক্রও এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তারা ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ।

এক সমাজকর্মী বলেন, মানুষ এখন আতঙ্কে, অথচ সবাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। আসল প্রয়োজন মানুষের নিরাপত্তা আশ্বাস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ভোটার তালিকা সংশোধনের (SIR) প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা মানবিকতা নিশ্চিত না হয়, তাহলে এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে গভীর সামাজিক বিভাজন তৈরি করতে পারে।

Advertisement
Advertisement

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/dikdorshon/public_html/details.php on line 531